Search This Blog

Thursday, January 11, 2018

ঝুমকোলতা

ঝুমকোলতা দেখেছো??

আমি দেখেছি। আমার বাড়ির গলির ঢোকার ঠিক মুখে একটা ভাঙা পাঁচিলের উপর ঝুলে থাকতো। পাঁচিলের ওপারে ছিল একটা পুরোনো বাড়ি, একদল বাদুড় থাকতো সেখানে। রোজ সন্ধ্যেবেলা পড়ে ফেরার সময়, এক পা দু পা, তার পর একদৌড়ে বাড়ি। বিশ্বাস করো, ঝুমকোলতাটাকে খিলখিলিয়ে হাসতে শুনতাম পিছনে।

Image result for ঝুমকোলতা
বাড়িটা তোমার আমার বাড়ির মতোই, শুনেছি ওখানে এক ঠাম্মা থাকতেন, ছেলেরা সব বাইরে থাকতো, সে সব যখনকার কথা আমি তখন শীতের সকালে রোদ্দুরে শুয়ে শুয়ে নাকি হাত পা ছুঁড়ে বিল্লুর সাথে খেলতাম। বিল্লুর ছবি দেখেছি, অ্যালবাম-এ, ইয়া মোটু একটা বেড়াল। আমার বিল্লুকেও মনে নেই, ঠাম্মাকেও না। আমার মনে যতদূর পড়ছে, বাড়িটা অন্ধকার বুকে নিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে আছে।  ভাঙা পাঁচিলের ফাঁক  দিয়ে ঘাস-পাতা জন্মানো বাগান, আর ওই ঝুমকোলতা।
রনি, বিট্টুরা ঘুড়ি ওড়ানোর কালে, ভো -কাট্টা ঘুড়ি ধাওয়া করতো যখন, তখনও ওই বাগানে যেত না, ওটা ছিল আমাদের নিজস্ব 'forbidden forest'..কিন্তু ঝুমকো, বরাবর আমাকে বড্ড টানতো। ঠাম্মার ছেলেরা কক্ষনো আসেনি বাড়িটায়।

একটু কিশোরীবেলায়, যখন 'দাশু' থেকে 'দত্তা'য় উত্তরণ হয়েছে, হঠাৎ স্কুল ছুটির দুপুরে ঘরে  ফেরার সময় গলির মুখে দাঁড়িয়ে যেতাম একটু। ঝুমকো'র পাপড়ি গুলোয় আঙ্গুল দিয়ে একবার আদর করে দিতাম। ঝুমকো খুশি হয়ে খিলখিলিয়ে উঠতো।

কলেজকালে, ট্রেন ধরার তাড়ায় আর গল্প হতো না ঝুমকোর সাথে, তবু কোয়ান্টাম মেকানিক্স  আর সদ্য  প্রেমে পড়া ব্যস্ততার মাঝে ঝুমকোর সাথে যখন দেখা হতো, একটু যেন দুলে উঠতো পাতাগুলো; মেয়েবেলার আরেক সই আমার!
 
বাড়িটা ওরা আর রাখছে না।  কলকাতা থেকে আধঘন্টা দূরের মফস্বলে জমির দাম খুব বেড়েছে, ওখানে ফ্ল্যাট উঠবে।

আচ্ছা, ফ্ল্যাটবাড়িতে ঝুমকোলতা হয় ?

No comments:

Post a Comment